গুলবাহার ১.০
হিমতলী গ্রামে শীত পড়েছে বেশ ৷ সকালে উঠে পানিতে হাত দেওয়া দায়৷ বিষের মতো শীত ৷ এত শীত আগে কখনো দেখা যায় নি এই অঞ্চলে ৷ অনেদিন ধরে মতি মিয়ার খবর নেই ৷ দিন দশেক আগে হিমতলী বাজারে দেখা গিয়েছিল মতিকে ৷ আজকাল তাকে খুব কম দেখা যায় মতিকে ৷ শুনেছি কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ধরেছে বেচারাকে ৷
মতির জন্য মায়া লাগে, তিন কূলে তার কেউ নেই ৷ এক গুলবাহার ছিল, তারও খবর নাই অনেক দিন ৷ শুনেছি বাপের রেখে যাওয়া একতলা একটা বাড়িতে থাকে ৷ স্বামীর সংসার ছেড়ে এখন এখানেই থাকে গুলবাহার ৷ বাড়ির সামনে একটা পুকুর আছে, আর কিছু ধানি জমি আছে ৷ পুকুর, জমি এসবের কোন ধার ধারে না গুলবাহার ৷ জবু কাকা নামে এক বয়স্ক লোক আছে, ওনিই সব দেখেন ৷ বছর শেষে গুলবাহারকে যা দেয়, তা দিয়েই তার চলে যায় ৷
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা৷ কনকনে শীত ৷ গুলবাহার শুয়ে আছে ৷ জানালা দিয়ে বাইরের জোছনার বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে ৷ আনমনে তাকিয়ে আছে গুলবাহার ৷ হঠাৎ বাইরে কাশির শব্দ ! কেউ একজন এসেছে ৷ মনি গেইট খুলে দেখে জবু কাকা ৷ মনি গুলবাহারের সাথে থাকে ৷ টুকটাক কাজ করে আর স্থানীয় একটা স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে ৷ মনি মেধাবী, রোল ৩ ৷
মনিকে খুব আদর করে গুলবাহার ৷ মনিকে দেখেই হাসি মুখে ভেতরে আসে জবু কাকা ৷
--কিরে মনি, আমার মা(গুলবাহার) কই?
-- আপনি কাছারি ঘরে বসেন জবু কাকা, আমি গুলবাহার বুবুকে গিয়ে কইতাছি ৷
জবু কাকা মাথা নেড়ে কাছারি ঘরে গিয়ে বসলো ৷
গুলবাহার ঘর থেকে বাইরে আসে ৷
-- কিরে মনি কে এসেছে ?
-- বুবু(গুলবাহার), জবু কাকা !
-- আসতে বল,
--- আচ্ছা !
জবু কাকার শুকনো মুখ ! মলিন চেহারা ৷ কিছু একটা বলতে চায় !
গুলবাহার ভাবছে, হয়তো জবু কাকার টাকা দরকার ৷ লজ্জায় হয়তো বলছে না !
গুলবাহার নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলো,
-- জবু কাকা, কিছু বলবেন? টাকা লাগবে ?
-- নারে মা, টাকা লাগবে না ৷
--তাহলে?
-- আজকে মতিকে দেখেছিলাম !
-- কী বলেন! কোথায়? (চিৎকার দিয়ে উঠল গুলবাহার)
-- মজনু মিয়ার দোকানে! আপন মনে জিলাপী খাচ্ছে ৷ আমাকে দেখেনি, আমি দেখেছি ৷
-- নিয়ে আসতে পারলেন না?
-- আরেক দিন দেখা হলে আসতে বলবো
বলেই জবু কিছু না বলে চলে গেল৷