মতি মিয়ার চিঠি ৷৷ ২.০
প্রিয় মতি
তোমার খবর শুনেছি! ঐদিন সন্ধ্যায় ফজলু কাকা এসেছিল ৷ তোমার কথা জিজ্ঞেস করতেই মুখটা মলিন হয়ে গেছে ৷ শুনেছি, আজকাল খাওয়া দাওয়া করোনা! বড্ড অনিয়ম করো! নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি মজা পাও, বলতে পারো? এত ছোট্ট জীবনে এতো অভিমান করে কী আর হবে ! আজ আছি, কাল নাই ৷ বাবা মারা গেছেন, আমার সব সুখ-শান্তিও যেন সা সা করে বিদায় নিলো ৷ জীবন বড় নিষ্ঠুর একটা শব্দ ৷ জীবন কারো পাওনা বাকি রাখে না! সব পরিশোধ করে দেয় সময় মতো ৷
তোমাকে একটা অনুরোধ করি, রাখবে? একদিন আসো না সময় করে! খেজুরের রস খাবো একদম গাছ থেকে নামিয়ে ৷ কনকনে শীতের ভোরে! তুমি গাছে উঠবে, খেজুরে রস নামিয়ে নিচে আনবে! আমি গাছের নিচে দাড়িয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো! কেমন হবে বলতো?
আমি রোজ স্বপ্ন দেখি! আর একবার ঘর করি, সংসার করি ! তোমার বুকে শুয়ে বাকি দিন গুলো কাটিয়ে দেই ৷
তোমার উদাসীনতা, ভুলে যাওয়া, খেয়ালিপনা আমি ভীষণ রকম ভালবাসি৷ তোমাকে ছাড়াও দেখো জোর করে কত ভাল আছি! এই ভাবে বেঁচে থাকাকে কি ভাল থাকা বলা যায়?
বাড়ির সামনের সজিনা গাছটা মারা যাচ্ছে দিন দিন ৷ দেখলে খুব মায়া লাগে ! এই গাছটা তোমার কত প্রিয় ছিল, মনে পড়ে? একুশে ফেব্রুয়ারিতে এই গাছ থেকে ফুল নিতে এখন আর কেউ আসে না৷ এতো অবহেলা অন্য কোন ফুল গাছ পেয়েছে বলে মনে হয় না৷ গাছটার দিকে যখন তাকাই তোমার কথা মনে পড়ে, খুব মনে পড়ে ৷ এই দেখো মতি! আমার কোন অহংকার নেই, যশ নেই৷ আজ আমার কিচ্ছু নাই ! আমার বাবাও নাই! খড়ের এক খন্ড টুকরার মতো তোমাকে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম! কত আশ্চর্য! একদিন আমার জন্য তুমি দিনের পর দিন কত সময় অপেক্ষায় কাটাতে! তার খবর কেউ রাখে নি! আজ দেখো, সেই আমি তোমাকে খুঁজে ফিরি, প্রতিদিন খুঁজি, প্রতি মুহূর্তে তোমাকে খুঁজি ৷
আমার শরীরটাও ভাল না ! যদি কখনো ইচ্ছে হয়, একবার এসো! অন্তত ফুল গাছটার জন্য হলেও একবার এসো ৷ দেখে যাও একবার, সেই ছোট্ট বেলার চির চেনা কাগজ ফুল গাছটাকে !
আমি জানি তুমি অভিমান করো, ছোট থেকেই দেখে আসছি অভিমান করো কথায় কথায় ! তাই বলে নিজেকে কষ্ট দিও না! তোমার কথা কেউ ভাবে না, হয়তো কখনো কখনো আমি ভাবি! এই গুলবাহার আর আগের গুলবাহার নেই ৷
ভাল থেকো!
ইতি
গুলবাহার