চাইর আনা-আডানা- এক ট্যাহা
১.০
এই শীতের সাথে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। গত সাড়ে চার বছর কর্মসূত্রে সিলেটে কাটিয়েছি। প্রায় বেশির ভাগ সাপ্তাহিক ছুটিতে নরসিংদী আসতাম। রবিবার খুবই ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম। মরজাল থেকে একটা লোকাল বাস ধরে সকাল ৭.০০ টার আগে ভৈরব যাইতাম। ভৈরব থেকে মোটরসাইকেলে অথবা অন্য কোন বাসে করে আশুগঞ্জের উজান ভাটি হোটেল যাইতাম। সেখান থেকে সিলেটের ফার্স্ট-টিপ বাসটা ধরতাম। এই বাসটি ঢাকা থেকে খুব ভোরে আসতো, উজানভাটি হোটেলে যাত্রা বিরতি দিতো। রবিবার যাত্রা-বিরতি দিতো ৫ মিনিট, রবিবার ব্যতিত অন্য দিন ১০_১৫ মিনিট যাত্রা-বিরতি দিতো। হোটেল উজান-ভাটি থেকে আমরা উঠতাম।
বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংক কিংবা অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের লোক থাকতো যারা সিলেটে গিয়ে অফিস ধরতো। সকাল ৯.৩০ এর মধ্যেই সিলেটে পৌঁছে যেতাম। অফিস ছিল সকাল ১০.০০ টায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে খুব কষ্ট হতো। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতাম রাত ২/৩ টা বাজে! মনে একটু আতংক কাজ করলেও একটু প্রশান্তি কাজ করতো এই ভেবে "আর একটু ঘুমাইতে পারবো! ৬.০০ টা বাজতে অনেক দেরি।"
শীতের সময় সিলেটে প্রচুর কমলা উঠতো। কোত্থেকে আসতো জানি না। বড় বড় কমলা! আমি কখনো কখনো ৫ কেজি/৮ কেজি পর্যন্ত কিনে নিয়ে আসতাম বাড়ির জন্য। দামও আমাদের স্থানীয় বাজারের তুলনায় কমই থাকতো। ভালোই লাগতো।
সিলেট শহরের একটা আলাদা বিশেষত্ব হলো- এ শহরে ধুলাবালি তুলনামূলক কম ছিল। রাস্তাঘাট পরিস্কার থাকতো। শহরটিও ছোট ছিল। দীর্ঘদিনের একটা আন্তরিকতা ছিল এ শহরটির সাথে।
জীবন নানা দিকে মোড় নেয়। সব সময় সবকিছু নিজের মনের মতো হয়ে উঠে না। তবু বাঁচতে হয়। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, দেশের জন্য। মানুষের জীবনে দুর্ভোগ, দুঃখগুলো হোক সাময়িক, চিরস্থায়ী হোক শান্তি।